Thursday, July 27, 2017

আমার গ্রাডুয়েশন প্রোগ্রাম।

আলহামদুলিল্লাহ। আগামীকাল আমার গ্রাডুয়েশন প্রোগ্রাম।

আজকের দিনের জন্য আমি আম্মুর কাছে ঋণী। দেশে কোনো জায়গায় চান্স না পেয়ে আমি আমেরিকা চলে আসলাম। দুই দুটা এ প্লাসধারী কোনো জায়গায় চান্স পেলো না -সেটা একটা ক্রাইম এর মত। আমি আমাকে আমার হীনমন্যতা ও অন্যান্য সব ধরণের চাপ থেকে লুকিয়ে রাখতে চলে এলাম আমেরিকা। ভিসা পাওয়ার পর অবশ্য আমার চাপ ও কষ্ট কমতে থাকলো। আমি একটা বড় দেশে যাচ্ছি পড়াশুনার জন্য তা নিশ্চই অনেক আনন্দের। এখানে চলে আসলাম। এখানে আসার পর অনেকে বললো,আমেরিকা চলে আসছো আর পড়াশুনা লাগে ? আমি মনে মনে বলি ,আমি পড়াশুনা ছাড়া বাঁচবো না ঠিক মত। খুব ছোটবেলা থেকে আমার পরিবার আমার মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে ,পড়তে হবে ,পড়াশুনাই জীবন। এখানে এসে একটা সেমিস্টার কোনো রকমে শেষ করলাম ওয়াশিংটনে। আমি সব কয়টা সাবজেক্টে কৃতিত্বের সাথে ফেল করলাম। কম্পিউটার সাইন্স এর ছাত্র একটা কম্পিউটার ছাড়া কেমনে ক্লাস করে পাশ করে? কলেজের কম্পিউটার ব্যবহার আর কত সময় ব্যবহার করা যায় ? কম্পিউটার কিনবো ? যে আমি এক কাপ কফি খেয়ে সারাদিন পার করেছি সে কিভাবে কম্পিউটার কিনবে ? চলে আসলাম প্রাণের শহর নিউ ইয়র্কে। কত কিছুই না দিলো এই শহরটা। প্রাণের শহর। আমি তো মনে করছি এখন এক্কেবারে ধুমাইয়া পড়াশুনা করবো। স্বপ্নগুলা আমাকে শান্তি দিচ্ছিলো না। একটা ক্লাসরুম আর একজন শিক্ষকহীনতায় ভুগতে ভুগতে আমি প্রায় নিষ্প্রাণ। পরে ওয়াসিংটনের ওই কলেজ বলে তারা টিসি দিতে পারবে না কারণ কোনো বিষয়ে আমি পাশ করি নাই। আর পাশ না করলে টিসি হয় না। নিউ ইয়র্কে বিভিন্ন কলেজে আমি যাই ভর্তি হওয়ার জন্য। কেও আমাকে নিতে চায় না। আমি নাকি আমার টিসি ওই কলেজ থেকে আনতেই হবে নতুবা হবে না। অনেক কলেজকে বললাম ,কোনো না কোনো আমাকে নেয়া যায় না? সবাই বলে না। এইভাবে না'তে আমি বাস করলাম এক বছর। জীবনের সবচেয়ে কঠিন বছর ছিল সালটা। আম্মুর মন খারাপ ,পরিবারের বাকি সবাইর মন খারাপ আমার এই ড্রপ আউট এ। আমার মন ও খারাপ ।
আম্মুর দর্শন হচ্ছে উনার ছেলেমেয়ে  শিক্ষা ছাড়া কোটিপতি হলেও উনি খুশি না। আগে শিক্ষিত হও ,পড়াশুনা করো ,পরে  যা মনে হয় করো এমন ভাব আম্মুর। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে গত ফেবরুয়ারিতে কলেজ শেষ করলাম। যেদিন কলেজের শেষ দিন শেষ করে আসলাম আমার মনে হচ্ছিলো ,মায়ের জন্য কিছু একটা করলাম। কালকে গ্রাডুয়েশন ,আম্মু ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে যে ভালো ভালো আলোকচিত্র পাঠানোর জন্য। ছবিগুলা পাশের বাসার আন্টিদের দেখিয়ে বলবে ,এই যে আমার ছেলে।তারা প্রশংসা করবে উনার ছেলেকে নিয়ে -এতেই উনি খুশি। কালো ড্রেসটা অনেক যত্নে ঝুলিয়ে রেখেছি। কালকে পরবো। আনন্দের দিনটাকে কিছু স্থিরচিত্রে আটকে রাখবো নাতি নাতনিদের জন্য।কম পানির মাছ বেশি লাফায়। আমি ৩.০৯ পেয়ে লাফাচ্ছি।  আগামী বছর আবারো পড়াশুনা চালিয়ে যাবো। আল্লাহ যেন তাওফিক দেন।


No comments:

Post a Comment